
প্রকাশিত: Sat, Jan 14, 2023 3:48 PM আপডেট: Sun, May 11, 2025 5:23 AM
বাবুইয়ার প্রহেলিকা
ইকবাল আনোয়ার
গল্প আর বাস্তবের পার্থক্য কী? আমি কি ভেবে কথা আর না পেয়ে জিজ্ঞাস করলাম। ভাবিনি যে কিছু তা নয়। ভেবেছিলাম, ও এতো কথা বলছে আমায়, আমার আপিস যাবার তাড়া, তার কথা গুলো বিশ্বাস হচ্ছিলো আবার হচ্ছিলো না, কথা বলার এমন নাটুকে ধারা যে, বুঝার উপায় নেই কেনটা কী, তাই এ চরম প্রশ্নটি করলে উত্তরে সে গরমিল করবেই, তখন আমি তাকে বলবো, পারসনা কিছুই, কেবল বক বক তোর, এখন যা। অবশ্য আমার এসব পথ মাড়িয়ে ঘুরিয়ে বলার কী দরকার? এমনিতেই তো বলতে পারি, আমার অপিস আছে, এখন যা। প্রকৃত প্রস্তাবে আমি তার কথার প্রহেলিকায় ধরা পড়েছিলাম। আমার প্রশ্নের মুখে ঝাটা মেরে ঝটপট ববুইয়া বললো, যা গল্প তা বাস্তব, যা বাস্তব তা গল্প। তার এ সাংঘাতিক উত্তরে আমি ঝাকামাকা অবস্থায় পড়ি। গেঞ্জিটা পরতে গিয়ে পিঠে আটকে যায়। বাবুইয়া তার হাত দিয়ে পিঠ থেকে গেঞ্জিটাকে ছুটিয়ে দেয়, এমনভাবে, যেন কাপড়ে আটকে যাওয়া বড়শি খোললো আর কি। আমি সটাং বসে পড়ি চেয়ারে, বলি কি ভাবে? বল দেখি বুদ্ধু কাহাকার।
ববুইয়া আমাদের বাসায় এসেছিলো, নাতির সাথে খেলার মানুষ হিসাবে। নাতির সাথে তার বিশেষ ভাব হয়েছিলো বটে, তবে বাসার লোকজন তাকে পছন্দ করতো না, কেনোনা সে কাজে ফাঁকি দিতো। তাই সারদিন ধমক খেতো। ববুইয়া প্লাস্টিকের রংএর ডিব্বা কেটে খমক বানিয়ে ফেলে, তা বাজিয়ে গান গাইতে থাকে। নাতি তার পেছনে পেছনে বাবুইয়া ভাইয়া বলে ঘুরে। তার কথায় আঞ্চলিক টান ছিলো। নাতিকে সাবধান করেছিলাম এ ভাবে কথা না বলতে। নাতি বলে বাবুইয়া ভাইয়া ভাল, সে নাকি ওভাবেই বলবে। বাবুইয়া গ্রামের সুন্দর সুন্দর উপমা দিয়ে যখন তখন গল্প বানায়, পাখির, নৌকার, সাপলার, কিরণমালার। নাতি আমার বিভুর হয়ে রয়।
এতসব দেখে আমি তার বিদ্যা বুদ্ধি লেখাপড়ার কথা জেনে নিতে, যারা তাকে এনে দিয়েছিলো, তাদের জিজ্ঞাসা করি। যা প্রথমেই জানা উচিৎ ছিলো। তারা বলে- সে দশ ক্লাস পড়েছে। পাড়া থেকে দূরে সদরে গিয়ে লাইব্রেরিতে পরে থাকতো। রাজনীতি করতোনা সরাসরি, কোন দল না, তবে, সত্য কথা বলতে ছাড়তোনা। অবশেষে যাদের আঁতে ঘা লেগেছিলো, তারা তাকে মিথ্যা মামলায় ফেলে দেয়। ববুইয়া ফেরার হয়। তারপর মানুষকে ধরে আমাদের বাসায় কাজের লোক হিসাবে যোগ দেয়? তাকে তার বয়সের তুলনায় ছোট দেখাতো। এ সব কথা জেনে তাকে বিদায় করে দেয়া হয়।
বাবুইয়া বিদায় হলে ল্যাটা চুকালোনা। তার প্রভাব প্রহেলিকার মতো থেকে গেলো ঘরে। নাতি আমার শুকিয়ে গেলো। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয় সে। ফলে মোবাইলে তাকে বলে দেয়া হয় মাঝে মধ্যে ঢাকায় আমাদের এখানে এসো কয়কদিন থেকে যেতে। সে এলে নাতিটি চাঙ্গা হয়। মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে কথা বলতে, নেটে ভিডিওতে কল দিতে হয়। নাতি খেতে না চাইলে বা স্কুলে যেতে না চাইলে, বাবুইয়া বললে কথা শোনে।
মামলা সেরে গেলে বাবুইয়া গ্রামের ছোট্ট বাজারে লাইব্রেরী দিয়ে বসে? বই বেচা কেনা বড় না, বড় হলো, সব বইগুলো তার পড়া হয়ে যায়। অনেকদিন বাবুইয়া আসেনা। ভাবছিলাম, তাকে আসতে বলবো। মেঘ চাইবো বলে ভাবছি, বৃষ্টি এসে গেলো। নাতি বাবুইয়াকে দেখে তার জমানো কথা, জমানো খেলনা আরো কতো কি, পসরা নিয়ে বসবে বলে, অন্দরে গেলো। বাবুইয়া তার স্বভাব অনুসারে কথা বলতে শুরু করলো। বলা শুরু করলে সে থামতে জানেনা। তার কথায় যাদু থাকে। তাকে থামাতেও কারো মনে থাকেনা। বাবুইয়া আজ এসেছে কাঁচা খেজুর রস আর পায়েস নিয়ে। গল্প কি ভাবে বাস্তব, তার উত্তরে সে বলে, আমরা যখন গল্প শুনি বা পড়ি, তা গল্প যেনে পড়িনা, যেমন সিনেমার দৃৃশ্যে আমরা কাঁদি হাসি, গল্প পড়েও তাই হয়। আমরা যা গল্প হিসাবে পড়ি বা শুনি তা এ নীল গ্রহে না হোক অন্য গ্রহে অন্য বাস্তবতায় ঘটছে। স্টিফেন হকিংএর রেফারেন্স দিয়ে সে প্যারালাল ইউনিভার্স, প্যারালাল আর্থ, ম্যাটার, এন্টি ম্যাটার এসব বলতে থাকে। সে পার্টিক্যাল ফিজিক্স বলতে থাকে।
সে বলে, এখানে যা বাস্তব আরেক বাস্তবতায় তা হলো নিছক গল্প, কল্পনা বা ঘটতে গিয়েও ঘটেনি, ঘটতে পারেনি, তবে অজান্তে আছে, রিসিসিভ হয়ে, সুপ্ত হয়ে, ঘুমন্ত হয়ে, ডমিনেন্ট হয়ে, লুকিয়ে। বাস্তবে বাস্তবতা বলে কিছু নেই আছে প্রজেক্ট বেইস্ড রিয়েলিটি, প্রকল্প নির্ভর বাস্তবতা? বিজ্ঞান বলে একটি অবস্থানের অসীম সংখ্যক বাস্তবতা হতে পারে। তার মধ্যে আনসার্টেনিটি রুল অনুযায়ী দৈব চয়নে একটি বাস্তবতা এখন এখানে উপস্থাপিত হচ্ছে বা প্লে করছে। সে কথার মধ্যে বহু ইংরেজি শব্দ-বাক্য প্রয়োগ করে। প্রকল্পের সংজ্ঞা হিসাবে সে যা বলে তা হলো, কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারন করে নিয়ে যখন কোন ব্যক্তি বা একটি দল একটি মডেলে কোনো বিষয়ে পর্যাবেক্ষন করতে সম্মত হয়, তাকে প্রকল্প বলে। তারপর সে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ফিজিক্স দিয়ে বলে যে, পর্যবেক্ষণ যা হবে ফলাফল তাতে প্রভাবিত হবে। যেমন, আলোকে কনা হিসাবে প্রমানের লক্ষ্যে পর্যবেক্ষণ করলে আলো কেবল কণা হিসাবে ধরা দেয়, আবার তাকে তরঙ্গ হিসাবে প্রমানের লক্ষ্য নিলে সে একমাত্র তাই হয়ে প্রমানীত হয়। এখানে একমাত্র কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আলো একই সঙ্গে কণা ও তরঙ্গ, এটাই প্রকৃত বাস্তব। যা কখনো জগতে পাওয়া যায় না।
তার এসব কথায় আমি হাদারাম হয়ে একদম ভড়কে গেলাম, তবু শোনতে বাস্তব মনে হচ্ছিলো, যুক্তিতে ধরা খাচ্ছিল, বুঝার উপায় ছিলোনা যে, সে ফিকশন বলছে কি না! ফলের মধ্যে এই হলো যে, আমার অপিসটা কামাই হয়ে গেলো! (গল্প)। লেখক: চিকিৎসক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
